• Call: 01983038942,01837380569
  • Email: physiopsk@gmail.com
স্ট্রোক কি ?
স্ট্রোক কি ?

স্ট্রোক হল মস্তিষ্কের রক্তনালির একটি রোগ। সেই রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়া অথবা ব্লক হয়ে যাওয়া স্ট্রোকের কারণ।

স্ট্রোকের ধরনঃ

সিডিসি(CDC= Center for Disease Control and prevention) এর মত অনুযায়ী ব্রেইন স্ট্রোক তিন ধরনের-

১/ ইশকেমিক স্ট্রোক( Ischemic stroke) :

মস্তিষ্কের রক্তনালীর ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে(blood Clot) রক্ত সরবরাহ বিঘ্ন ঘটালে কিছু ব্রেইন টিস্যু মারা যায়, এটাই ইশকেমিক স্ট্রোক। ৮৫%স্ট্রোকই ইশকেমিক স্ট্রোক । উচ্চরক্তচাপ ইশকেমিক স্ট্রোকের বড় কারণ ।

২/ হেমোরেজিক স্ট্রোক( Hemorrhagic Stroke) :

মস্তিষ্কের ভিতরে কোন রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে হেমোরেজিক স্ট্রোক হয় । এই ধরনের স্ট্রোকে তিন মাসের মধ্যে মৃত্যু ঝুকি অনেক অনেক বেশি ।

৩/ খুব ছোট স্ট্রোক( Mini Stroke or Transient Ischemic Attack- TIA) :

মস্তিষ্কের রক্তনালীতে অস্থায়ীভাবে অল্প কিছু সময়ের জন্য রক্ত সরবরাহ বিঘ্ন হলে এই ধরনের স্ট্রোক হয়! যেটা দ্রুতই আবার ভাল হয়ে যায়।

কেন স্ট্রোক হয়?

সাধারণত কিছু ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে ধীরে ধীরে বাড়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাই-প্রেসার, হাই-কোলেস্টেরল, ধূমপান, পারিবারিক স্ট্রোকের ইতিহাস, হার্টের অসুখ যেমন- অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, রক্তজমাট বাঁধা অসুখ, ক্যান্সার ইত্যাদি আরও অনেক কারণ রয়েছে স্ট্রোকের।

হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুকির কারণ গুলো মোটামুটি একই, যেমন

· উচ্চ রক্তচাপ

· বেশি কোলেস্টেরল

· ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ

· ধূমপান

· স্থূলতা

· মদ্যপান

· পারিবারিক ইতিহাস

সাধারণত স্ট্রোক ৫৫ বছরের বেশি বয়স্ক পুরুষদের বেশি হয়

তাই শুধু বয়স্কদের নয়, একেবারে তরুণদের মধ্যেও স্ট্রোক হতে দেখা যায়।

সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা যায়ঃ

· মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া, ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হওয়া

· কথা বলতে সমস্যা হওয়া

· অবশ, দুর্বলতা লাগা, শরীরের এক পাশ অকেজো হওয়া

· চোখে ঘোলা লাগা, অন্ধকার লাগা বা ডাবল দেখা

· হঠাৎ খুব মাথা ব্যথা

লক্ষণ ও পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে চিকিৎসকরা একটি শব্দ মাথায় রাখতে বলেছেন।

সেটা হল: FAST

এখানে

F = Face মুখ বেঁকে যাওয়া,

A = Arm হাত অবশ হয়ে আসা,

S = Speech কথা জড়িয়ে যাওয়া বা এবং

T = Time যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।

স্বাস্থ্যসম্মত জীবনব্যবস্থা বজায় রাখলে অনেক খানি ঝুকি কমানো যায় :

· ব্লাড প্রেসার জানা এবং কন্ট্রোল করা

· ধূমপান না করা

· কোলেসটেরল এবং চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া

· নিয়ম মাফিক খাবার খাওয়া

· সতর্ক ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা

· নিয়ম করে হাটা বা হালকা দৌড়ানো

· দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা

· মাদক না নেয়া , মদ্য পান না করা

· ওজন কমানো

চিকিৎসা পদ্ধতি

স্ট্রোক পরবর্তী সমস্যাগুলো দূর করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিয়মিত দিনে ৩-৪ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে ২-৬ মাস। এবং মনে রাখবেন, স্ট্রোকের পর যত দ্রুত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করা যাবে, রোগীর কার্যক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে।
স্ট্রোকের প্রাথমিক অবস্থায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা :
১। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করণ
২। সঠিক পজিশনিং
৩। মাংস পেশীর স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য বজায় রাখা
স্ট্রোকের ২-৩ সপ্তাহ পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:
১। মাংস পেশীর স্বাভাবিক টান ফিরিয়ে আনা
২। শরীরের স্বাভাবিক অ্যালাইনমেন্ট ফিরিয়ে আনা
৩। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের স্বাভাবিক নাড়ানোর ক্ষমতা বা মুভমেন্ট ফিরিয়ে আনা
৪। ব্যালেন্স ও কো-অরডিনেশন উন্নত করা স্বাভাবিক হাঁটার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা
৫। রোগীর কর্মদক্ষতা বাড়ানো
৬। রোগীর মানষিক অবস্থা উন্নত করা
৭। রোগীকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে যেতে সাহায্য করা

অতএব রোগীর শারীরিক সমস্যা দূর করে কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা অপরিসীম। সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।