• Call: 01983038942,01837380569
  • Email: physiopsk@gmail.com
পিএলআইডি /PLID রোগ কি ?
পিএলআইডি /PLID রোগ কি ?

সবাই জীবনে কোনো না কোনো সময় কোমরব্যথায় ভোগেন। এই ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো পিএলআইডি /PLID রোগ।

PLID মানে Prolapse Lumbar Intervertebral Disc. অর্থাৎ আমাদের পিঠ বা কোমর অনেকগুলো ছোট ছোট হাড় নিয়ে গঠিত, যাকে আমরা কশেরুকা বা ভাট্রিবা বলি ।   এই ভাট্রিবাগুলোর মাঝখানে একধরনের কার্টিলেজ থাকে, যাকে আমরা ইন্টারভাট্রিবাল ডিস্ক বলি।

অনেক সময় বিভিন্ন কারনে বিশেষ করে আঘাতজনিত কারনে কিংবা হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি জনিত কারনে এই ইন্টারভাট্রিবাল ডিস্ক বের হয়ে এসে নার্ভে চাপ দেয়। ফলে কোমরে অনেক ব্যথা হয়, অনেক সময় এই ব্যথা পায়ের থোড়ার নিচ পর্যন্ত চলে যায় ।  পা ঝিন ঝিন করে, অবশ অবশ লাগে ।একে সায়াটিক পেইনও বলে। সাধারণত লাম্বার ৪ ও ৫ নম্বর কশেরুকায় এটি ঘটে থাকে।

পিএলআইডি রোগের লক্ষন কি ?

পিএল আইডি বা ডিস্ক প্রলাপ্স  রোগের প্রথম লক্ষন হল প্রচন্ড কোমর ব্যথা । কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথা । পা ঝিন ঝিন বা অবশ অবশ হতে পারে ।

অনেক সময় এই ব্যথা কোমরে না থেকে সরাসরি পায়ে চলে যায় ।  সিরিয়াস ক্ষেত্রে প্রস্রাব বা পায়খানা ধরে রাখতে সমস্যা হয় । পায়ের আঙ্গুল বা পাতা নড়ানো যাচ্ছে না , পায়ের আঙ্গুল বা পাতার দিকে অনুভূতি কমে গেছে । মাঝে মাঝে দেখা যায় অনেক রোগীর কোমর বাঁকা হয়ে যেকোন একদিকে সরে গেছে , মেডিকেল ভাষায় বলি কোমর একদিকে বাঁকা হয়ে গেছে । ডিস্ক প্রলাপ্স এর প্রথমদিকে হয়তো অনেক খারাপ অবস্থা দেখা যায় , বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় । কোনভাবেই নড়াচড়া করা যায় না ।

সামনের দিকে ঝুঁকে নামাজ পড়লে বা কোনো জিনিস তুলতে গেলে ব্যথা বাড়ে। ডিস্ক প্রলাপস গুরুতর হলে প্রস্রাব, পায়খানা, সেক্সের নার্ভ ড্যামেজ হয়ে যায় বা প্যারালাইসিস হয়। এই অবস্থাকে বলে কৌডা ইকুইন সিনড্রোম।

পিএলআইডি  রোগের চিকিৎসা

প্রথমত ব্যথা  সাময়িকভাবে কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যথার ওষুধ খাওয়া যেতে পারে , তবে ব্যথার ওষুধের বিকল্প হিসেবে অনেক ধরনের ফিজিওথেরাপি  মডালিটিস , ম্যানুয়াল টেকনিক  আছে যেইগুলো দিলে  সাথে সাথে ব্যথা কমানো যায় । তবে শুধু ব্যথার ওষুধ আর রেস্ট না নিয়ে স্পেসিফিকভাবে চিকিৎসা নেওয়া উচিত ।

পিএলআইডি সমস্যায়  অনেক সময় কোমর বাঁকা ( shift) হয়ে যায়। তবে এই বাঁকা কোমর সোজা না হলে অর্থাৎ শিফট কারেকশন না হলে ব্যথা ভাল হবে না।। একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বিভিন্ন ধরনের ম্যানুয়াল টেকনিক এবং রোগীর পজিশন কারেক্ট করে বাকা কোমর খুব সহজে সোজা করে ঠিক করে থাকেন ।

কোমর ব্যথার জন্য সারাবিশ্বে জনপ্রিয় চিকিৎসা হল ফিজিওথেরাপি । পিএলআইডি রোগের চিকিৎসা হিসেবে  অনেকেই হঠাৎ করেই সার্জারির মত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে একটা নিয়ম আছে, কোমর ব্যথার সার্জারির আগে অবশ্যই একজন মাস্কুলোস্কেলেটাল বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের লিখিত অনুমতি নিতে হয়। অর্থাৎ উনি এসেসমেন্ট বা ফিজিওথেরাপি দিয়ে দেখছেন,  রোগী ফিজিওথেরাপি দিয়ে ভাল হবে না। সার্জন তখন চিন্তা করবে, তার সার্জারি লাগবে কি না।

আমি মনে করি আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও পিএলআইডি রোগের   সার্জারির করার আগে অবশ্যই একাধিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে লিখিত পরামর্শ নিন।  PLID পিএলআইডি সমস্যা শুরু দিকে হলে , সেই ক্ষেত্রে মাইক্রো কারেন্ট থেরাপি অনেক উপকারি । ডিস্ক প্রলাপ্স এর ব্যথা এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাল করা সম্ভব । ক্রনিক ব্যথার ক্ষেত্রের ম্যানুপুলেশন , ড্রাই নিডল , আকুপাংচার , শকওয়েভ থেরাপি অনেক উপকারী । সঠিকেভাবে চিকিৎসা দিলে ২-৩ সপ্তাহে পিএল আইডি সমস্যা অপারেশন ছাড়াই ভাল হয়ে যায় । তাই পিএলআইডি  রোগের চিকিৎসা নিয়ে অযথা টেনশনের করার মানে হয় না । সঠিক চিকিৎসা নিন, সুস্থ হোন ।

কী করবেন

কোমরব্যথার যথাযথ চিকিৎসা রয়েছে। কিছু উপায় অবলম্বন করলে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যথা কমে যেতে পারে। ডাক্তার দেখানোর পর, ডাক্তার আপনাকে বলোক আর নাই বলোক সরাসরি ফিজিওথেরাপিস্ট কাছে চলে যাবেন।এ জন্য কিছুদিন পরিপূর্ণ বিশ্রাম করা, কিছু ব্যায়াম, শক্ত বিছানায় ঘুমানো, নিচু হয়ে ভারী কিছু না তোলা ও ভারী কাজ না করা, পাতলা বালিশে ঘুমানো, বিছানা থেকে ওঠার সময় কাত হয়ে ওঠা, অতিরিক্ত ভ্রমণ পরিহার, মোটরসাইকেল না চালানোর মতো কিছু বিষয় অনুসরণ করা উচিত। পাশাপাশি ওজন কমাতে হবে।

ফিজিওথেরাপিস্ট এবং চেম্বার লিস্ট।( ক্লিক করুন )

 পিএলআইডি জনিত  কোমর ব্যথা প্রতিরোধ করবেন

 ১/ধূমপান থেকে দূরে থাকবেন ।

২/ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখবেন ।

৩/বেশিক্ষন সামনে ঝুকে কাজ করবেন না।

৪/ ভারী কোন কিছু একা একা নিচ থেকে তুলতে যাবেন না ।

৫/নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।