যেসব ব্যথা আমাদের বেশি পীড়া দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক হচ্ছে কাঁধের ব্যথা। এটা ফ্রোজেন শোল্ডার হিসেবে পরিচিত।
এ সমস্যা হলে হাত বিশ্রামে থাকলে বা আক্রান্ত হাত দিয়ে কোনো কাজ না করলে সাধারণত ব্যথা অনুভূত হয় না। কিন্তু হাত দিয়ে কিছু ধরতে গেলে বা ওঠাতে গেলে কাঁধে বিদ্যুচ্চমকের মতো তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
অনেকে ব্যথায় রাতে ঘুমাতে পারেন না। শরীরের আক্রান্ত পাশে ভর দিয়ে শুতে গেলে ঘুম ভেঙে যায়। গভীর রাতে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। একবার ব্যথা শুরু হলে আর থামতে চায় না। এমনকি ব্যথার ওষুধেও কাজ হয় না। রোগীরা গরম পানির শেক, মালিশ ইত্যাদি দিতে থাকেন। এসবেও কাজ হয় না।
কাঁধে ব্যথার কারণ:
নানাবিধ কারণে কাঁধের ব্যথা হয় কিন্তু কাঁধের ব্যথায় শুধু ফ্রোজেন শোল্ডার মনে করাটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কাঁধে ব্যথার কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে…
কাঁধের জয়েন্টগুলোর ক্যাপসুলে প্রদাহজনিত কারণে ব্যথা, স্টিফনেস বা জমাটবদ্ধতা।
কাঁধের জয়েন্ট ছাড়াও আরও অনেক ধরনের স্ট্রাকচার –যেমন টেন্ডন, মাসল, বার্সা, লিগামেন্ট, জয়েন্ট কারটিলেজ এ সমস্যাজনিত কারণে কাঁধের ব্যথা হতে পারে ।
স্পোর্টস ইনজুরি জনিত কিংবা পড়ে গিয়ে বা আঘাতজনিত কারণে কাঁধে ব্যথা দেখা যায় ।
আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ঘাড় থেকে স্নায়ুজনিত কাঁধে ব্যথা আসতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে অর্থপেডিক সার্জারির পরবর্তীতে কাঁধে ব্যথা, স্টিফনেস, দুর্বলতা দেখা যায়।
স্ট্রোক জনিত কারণে ও কার্ডিয়াক সার্জারি পরবর্তীও কাঁধে ব্যথা হতে পারে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিত্তথলির প্রদাহ, যক্ষ্মা, ফুসফুসে ক্যান্সার জনিত কারণেও কাঁধে ব্যথা হতে পারে ।
ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া বা শরীরে অতিরিক্ত মেদ, হাইপার থাইরয়েড, হৃদরোগ ও প্যারালাইসিস রোগীদের কাঁধে ব্যথা বেশি দেখা যায়।
চিকিৎসা
ডায়াবেটিস থাকলে ইন্ট্রা–আর্টিকুলার স্টেরয়েড ইনজেকশন না দেওয়াই ভালো। এতে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা ভালো হয় না। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ও ম্যানিপুলেশনের সমন্বয় অর্থাৎ আইপিএম খুব কার্যকর। অনেক ক্ষেত্রে ইলেকট্রোথেরাপিতে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীকে ধৈর্য ধরতে হবে। ফ্রোজেন শোল্ডারের ব্যথা নিমেষেই দূর করা সম্ভব নয়। পুরোপুরি ব্যথা ভালো হতে দু–তিন মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।